দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ, রামপুরা এলাকায় টিসিবির ট্রাক লাইনে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় মামুনুর রহমানের। তিনি পেশায় একজন
ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ী। তিনি রামপুরা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার। চাল, ডাল ও সয়াবিন তেল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছে টিসিবি।
তার
মতে একটা সময় ছিল যখন তিনি পাঁচ লিটারের বোতল কিনতেন। এখন আমার সামর্থ্য নেই। তাই এখন তিনি টিসিবির ট্রাক থেকে দুই
লিটারের
বোতল কেনেন। তিনি পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি ডালও কিনেছেন।
আরও খবর পেতে ভিজিট করুউঃ dailypotrika.xyz
দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ
এই মোটা ডাল ৫০ টাকায় কিনতাম। এখন তা 75 টাকা। খুচরা বাজারে তা ৯০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা।
টিসিবি
ট্রাকের দাম ১১০ টাকা। তাই তিনি এখান থেকে কিনছেন। তিনি বলেন, মাসিক আয়ের অর্ধেক চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। এরই মধ্যে
বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন। মার্চ থেকে হয়তো আরও ৫০০ গুনতে হবে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। মামুনুর রহমান জানান
তিনি
প্রতি শুক্রবার মুরগি ও মাছ কিনতেন। এখন তিনি মাছ কেনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার বয়লার মুরগি কিনে
বাচ্চাদের
খাওয়ান। ডাল, মাশকারা আর সবজি দিয়েই চলছে বাকি দিনগুলো। কারণ সবজির বাজার অনেক বেশি। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে ভোগা
হাজারো মামুন নীরবে কষ্ট পাচ্ছে। জীবিকার চাকায় পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা
যথেচ্ছ
দাম বাড়াচ্ছেন।
ফলে শীত মৌসুমেও কমেনি সবজির দাম
য়াবিন তেল, আটা, চিনির বাজারে পাগল ঘোড়ার মতো ছুটছে। রসুন ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম হলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা
অনেক বেশি। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগগুলি মনিটরিংয়ের অধীনে নেই। দু-একটি প্রচারণা ছাড়া বাজার মনিটরিং
কার্যক্রম নেই। তবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা, এমনকি খোদ অর্থমন্ত্রীও কিছুদিন আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা
বেড়েছে। দেশটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কাতারে প্রবেশ করেছে। ফলে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়
এড়াতে এটি একটি বক্তব্য। এমনকি করোনায়ও দেশের মানুষের আয় ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। কিন্তু এটা কতজন মানুষ? অধিকাংশ মানুষের আয়ও কমেছে।
ফলে আয়বৈষম্য কমানো না গেলে অদূর ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানও। এদিকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল টমেটোও বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজিতে।
শিম এখনো ৪০-৬০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি দেড়শ টাকা। একটি ছোট ফুলকপি কিনতে 30-40 টাকা দিতে হয়। একটি কুমড়া 80-120 টাকা।
চার লরেলের টিপ 40 টাকা। পাঁচ থেকে ছয়টি শাস্তির দাম 30 টাকা। এক মুঠো পালং শাক বা সরিষার দাম ২০ টাকা।
দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ
কয়েক ডজন ডিম অনেক আগেই সেঞ্চুরি করেছে, যার দাম এখন ১২০ টাকা। এক বছর আগে দুই কেজি আটার প্যাকেটের দাম ছিল ৭৫ টাকা,
এখন
৯০ টাকা। এক কেজি লাল চিনির দাম ছিল ৭৫ টাকা। তিন মাস আগে যখন সংকট ছিল, তখন সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করেছিল ৮৫ টাকা।
কিন্তু
এই দামে কোথাও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। লাল চিনি এখন কেজিতে ৯৫ টাকা। কিছু ক্ষেত্রে 100 টাকা। আর প্রতি কেজি সাদা চিনি ৮৫-৯০ টাকা।
তবে সরকারি গুদামে লাল চিনি অবিক্রীত থেকে যায়, যা বিক্রি হচ্ছে না। সয়াবিনের বাজার কি আদৌ স্থিতিশীল হবে? আমাদের কৃষিপণ্যের
উচ্চমূল্যের কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত
প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।